public/icons8-arrow-back-96.pngসকল

কমপক্ষে ১২০ বার রক্ত দিতে পারেন একজন রক্তদাতা: ডা. মনিরুজ্জামান

বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪ এ ২:৩৪ AM
https://i.ibb.co/J5XNkfJ/7c8755734c7a6a61d8c48c6c696e917619d26b0a0cf1dde1.jpg
মানুষের জীবন বাঁচাতে নানান সময় রক্ত গ্রহণ ও রক্ত দানের প্রয়োজন হয়। এ রক্ত দেয়ার মাধ্যমে একটি মানবিক সমাজ কাঠামো আরও দৃঢ় হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শারীরিকভাবে পূর্ণ সুস্থ থাকলে টানা কমপক্ষে ৪০ বছর যে কেউ রক্ত দিতে পারেন। সে হিসেবে কেউ বছরে যদি ৩ বার করে রক্ত দান করে যান, তাহলে তিনি তার জীবদ্দশায় কমপক্ষে ১২০ বার রক্ত দিতে পারেন
রক্ত দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা মানতে হয়। এ বিষয়ে বেশ কছিু পরামর্শ দিয়েছেন কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাবের কো-অর্ডিনেটর ডা. মনিরুজ্জামান। কোনো কারণে কারও যদি অ্যানিমিয়া বা রক্তের স্বল্পতা হয় যেমন থ্যালাসেমিয়া, হিমোফোবিয়া, আয়রন ডিফেন্সি বা অ্যানিমিয়া— এসব ক্ষেত্রেই সাধারণত একজন মানুষের রক্তের প্রয়োজন হয়। এছাড়া ক্যান্সার, গুরুতর দুর্ঘটনা, আগুনে পোড়া রোগীর ক্ষেত্রেও রক্তের প্রয়োজন হয়। প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে অধিক রক্তক্ষরণ হলে কখনো কখনো রক্তের প্রয়োজন হয়। সিজারিয়ান অপারেশন বা অন্যান্য অপারেশন হলে সেক্ষেত্রেও রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া ওপেন হার্ট সার্জারি বা বাইপাস সার্জারিসহ এমন নানা কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়।
হিমোফোবিয়া রোগের ক্ষেত্রে বার বার রক্তের প্রয়োজন হয়। থ্যালাসেমিয়া রোগীর কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসে দুবারও রক্ত লাগতে পারে। আবার হিমোফোবিয়া রোগীর ক্ষেত্রে মাসে চার বার বা চার ব্যাগ রক্ত দেয়া লাগতে পারে। রক্ত দানের ক্ষেত্রে ১৮ বছর হলে যে কেউ রক্ত দিতে পারেন। বাংলাদেশের রক্ত পরিসঞ্চালন আইন অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৬০ বয়সী যে কেউ শারীরিকভাবে ফিট থাকলে রক্ত দিতে পারেন। দেখা যায়, মধ্যবয়সীরাই সাধারণত বেশি রক্ত দেন কিন্তু ৫৮-৬০ বছর বয়সীরাও শারীরিকভাবে ফিট থাকলে রক্ত দিতে পারেন। বছরে সাধারণত আমরা ৩ বার রক্ত দিতে পারি।
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে একজন রক্তদাতার ওজন থাকতে হবে কমপক্ষে ৪৫-৫০ কেজি। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকতে হবে। হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক থাকতে হবে— পুরুষদের ক্ষেত্রে ৭৩ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৭১ শতাংশ। রক্ত দেয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক কোনো অসুস্থতা থাকা যাবে না। যেমন— জ্বর বা হরমোনাল সমস্যা। কোনো এন্টিবায়োটিক ওষুধ খেলেও রক্ত না দেয়া উত্তম। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি অসুখ উচ্চ রক্তচাপ যদি কারো থাকে তিনি যদি ওষুধ খান এবং ডায়াবেটিস থাকে তিনি যদি ইনসুলিন নেন অথবা ওষুধ খান তাদের ক্ষেত্রে রক্ত না দেয়াই ভালো। শারীরিকভাবে পূর্ণ সুস্থতা থাকলে টানা কমপক্ষে ৪০ বছর যে কেউ রক্ত দিতে পারেন। সে হিসেবে কেউ বছরে যদি ৩ বার করে রক্ত দান করে যান, তাহলে তিনি তার জীবদ্দশায় কমপক্ষে ১২০ বার রক্ত দিতে পারেন। কেউ কেউ এর বেশি দেয়ার সামর্থ্য রাখেন। এ ক্ষেত্রে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানো অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক স্বেচ্ছায় রক্তদাতা জেমস হ্যারিসনের কথা উল্লেখ করা যায়। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ৮১ বছর বয়সী হ্যারিসন ১ হাজার ১৭৩ বারের মতো রক্ত দিয়েছেন। মূলত নিজের রক্ত ও আলাদাভাবে রক্তের উপাদান প্লাজমা দানের মাধ্যমে শিশুদের জন্যে তিনি এতবার রক্তদানের সেবা করতে পেরেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় রক্তদানের বয়সসীমা নির্ধারিত থাকায় ২০১৮ সালে মে পর্যন্ত ছিল তার সবশেষ রক্তদান। মাত্র ১৪ বছর বয়সে জরুরি অস্ত্রোপচারের কারণে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল হ্যারিসনের। সে যাত্রায় রক্ত পেয়ে প্রাণ বেঁচে যায় তার। এরপর বয়স ১৮ বছর হতেই তিনি নিয়মিত রক্তদান করতে শুরু করেন। আমাদের দেশেও বহুবার রক্ত দানে আগ্রহী স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টামের কথা উল্লেখ করা যায়। কোয়ান্টামে ৫০ বারের অধিক রক্ত দান করেছেন এমন শতাধিক রক্তদাতা রয়েছেন। পঁচিশের বেশি রক্তদানকারীর সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে আর সহস্রাধিক রক্তদাতা রয়েছেন যারা কেউ ১০ বার, ১৫ বার এবং ২০ বারের রক্তদাতা।
২০০০ সালে কোয়ান্টাম ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়। পাঁচ লক্ষাধিক স্বেচ্ছায় রক্তদাতার বিশাল পুল গঠন করেছেন তারা। আর দুই যুগে তাদের সরবরাহের পরিমাণ ১৬ লক্ষাধিক রক্ত ও রক্ত উপাদান। এক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা পাওয়ার যোগ্য স্বেচ্ছায় রক্তদাতারাই।

বহুবার রক্তদান আসলে কঠিন কোনো বিষয় নয়। এজন্যে প্রয়োজন ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। এক্ষেত্রে ১৯তম জন্মদিনেই শুরুটা সবচেয়ে উত্তম। এরপর ধারাবাহিকভাবে লেগে থাকা। নিয়মিত রক্তদানে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণেরও বেশি কমে যায়। তাছাড়া একজন মানুষ ১২০ বা ততোধিক বার রক্ত দান করতে পারার অর্থ হচ্ছে তিনি বছরের পর বছর ভালো একটি কাজের অনুরণন পেলেন। ফলে হাজারো মুমূর্ষুকে সেবাদানে আত্মতৃপ্তির পাশাপাশি মানবিক মানুষ হিসেবে গণ্য হলেন সমাজে।
সাধারণত রক্ত না দেয়ার কারণ সাধারণত সূচ ফোটানোর ভয়, আশঙ্কা, দুর্বল হয়ে পড়ার আতঙ্ক, বয়োজ্যেষ্ঠদের অমূলক বাধা, সামাজিক বা ধর্মীয় কিছু কুসংস্কার, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, স্ক্রিনিং রিপোর্ট না পাওয়া, ভুল রিপোর্টিং, রক্ত নষ্ট হবার গুজব, নিজের প্রয়োজনে রক্ত না পাওয়ার ক্ষোভ, যথাযথ সেবা না পাওয়া, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রক্ত না দেয়ার মানসিকতা এমনকি ‘আমাকে তো কেউ কখনও এই ভালো কাজ করতে ডাকল না’জাতীয় মানসিক ভাবনার কারণে মানুষ রক্ত দেয় না। রক্তদান বিষয়ে কিছু সতর্কতা ১. এইডস, ম্যালেরিয়া, হাইপারটেনশন, হেপাটাইটিস বা অন্য কোনো সংক্রামক রোগ থাকলে রক্ত দান করা যাবে না।
২. ডায়াবেটিস থাকলে যদি সুগার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং কোনো ওষুধ না গ্রহণ করেন তবে তিনি রক্ত দিতে পারবেন।
৩. ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার কমপক্ষে এক বছর না হওয়া পর্যন্ত রক্ত দেয়া যাবে না। কারণ এক বছর পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার জীবাণু শরীরে থাকতে পারে।
৪. দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পর্যাপ্ত না থাকলে সাময়িক সময়ের জন্যে রক্তদানে বিরত থাকা ভালো। ৫. রক্তদানের ২৪ ঘণ্টার পূর্বে মদ্যপান করলে রক্ত দেয়া যাবে না।
৬. আকুপাংচার, কান ফুটো বা ট্যাটু করার সঙ্গে সঙ্গেই রক্তদান করা যাবে না। এসব কাজে সুঁচ জীবাণুমুক্ত ছিল কি না— সেটি দেখাও গুরুত্বপূর্ণ।
৭. ফ্লুতে আক্রান্ত হলে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
৮. গর্ভবতী এবং সদ্য প্রসব করেছেন এমন মায়েরাও রক্তদান করতে পারবেন না।
১০. অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণরত অবস্থায় রক্তদান করা যাবে না।
১১. নিজের দেহে রক্ত নিলে অন্তত বছরখানেক অপেক্ষা করতে হবে।
১২. বিদেশ গেলে ফিরে আসার পর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
১৩. দাঁত বা মুখের কোনো অপারেশন হলে অপেক্ষা করতে হবে।
১৪. ধূমপান করার চার ঘণ্টা পর্যন্ত রক্তদান না করা ভালো।
১৫. বড় কোনো সার্জারি হয়ে থাকলে কমপক্ষে ৬ মাস এবং ছোট সার্জারি হলে কমপক্ষে ২ মাস অপেক্ষা করতে হবে।
১৬. এন্ডোস্কোপি করার পর কমপক্ষে চার মাস পর্যন্ত রক্তদান করা যাবে না।



#FF0000

Copyright © 2024

Daily Metro All rights reserved

Privacy Policy
fb.pngX.pnggmail.pngig.pngwhatsApp.png