সকল‘এমন কায়দায় মারব সবাই জানবে আত্মহত্যা করেছিস’, স্ত্রীকে ইবি শিক্ষক
বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪ এ ৮:২৮ PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বিয়ের পর থেকে তাকে এমন নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষকের স্ত্রী।
ভুক্তভোগী স্ত্রী জয়া সাহা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ওই দম্পতির ৫ বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। ৯ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় জয়া ও সঞ্জয় কুমারের। বিয়ের পর থেকেই তাদের সাংসারিক জীবনে অশান্তি ও কলহ লেগেই থাকতো বলে জানান সঞ্জয়ের স্ত্রী। বিয়ের সময় ২৫ লাখ টাকা ও ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানা আসবাবপত্র দেওয়া হয় সঞ্জয়কে। তাকে দেওয়া স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে ২০২০ সালে ঢাকার গাবতলি এলাকায় নিজের নামে জমি কেনেন এবং সেই জমিতে স্ত্রীকে শেয়ার দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী। এত কিছু দেওয়ার পরও সবসময় অতৃপ্ত ও অখুশি থাকতো বলে জানান তার স্ত্রী। এ নিয়ে তাকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ তার। পরে স্বামীর অনিচ্ছায় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ভর্তি হওয়ায় তার ওপর শারীরিক নিযার্তন শুরু করেন সঞ্জয়। ক্লাসে যেতে ও অন্যদের সঙ্গে মিশতে বাধা দেন ওই শিক্ষক। এ ছাড়া বোরকা পরে ক্যাম্পাসে আসতে চাপ প্রয়োগ করেন তাকে। ক্লাসে যেতে চাইলে সঞ্জয় তার স্ত্রীকে বলতেন, ‘কিসের ক্লাস, কিসের যাওয়া লাগবে ক্যাম্পাস...(গালি)।’ নিজ বিভাগের ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, যৌন হয়ারানিসহ, অশ্লীল ফোনালাপসহ নানা অপকর্ম ঢাকতে তাকে ক্যাম্পাসে আসতে বাধা দিতেন বলে অভিযোগ স্ত্রীর।
বিষয়টি নিয়ে তাকে নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ করেন স্ত্রী। স্যান্ডেল, বেল্ট, ঝাঁটা, খুন্তি দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হতো। মারতে মারতে তিনি বলতেন, ‘.....(প্রকাশের অযোগ্য ভাষা) বাচ্চা, নষ্টা...(গালি), তোকে নাটোর ...(গালি) রেখে আসব। তোর বাপ দাদা চৌদ্দগোষ্ঠীকে সাইজ করে আসব। কী পাইছু এখানে, তুই নাটোরে যাস না কেন। বাঁচতে চাইলে বাপের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আয়।’ অনেক সময় মারতে মারতে অসুস্থ হয়ে গেলে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি নাটোরে রেখে আসতো সঞ্জয়।
অনেক সময় স্ত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন তিনি। এসময় তিনি বলতেন, ‘তোকে আমি মেরেই ফেলব। এমন কায়দায় খুন করব, সবাই জানবে তুই আত্মহত্যা করেছিস। খুন করেছি জানলেও আমার কিচ্ছু হবে না। আমার হাত অনেক লম্বা। আমার অনেক পাওয়ারফুল লোক আছে। তোর বাপের কী ক্ষমতা আছে।’ এ ছাড়া বটি দিয়ে তাকে হত্যা করতেও উদ্যত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন স্ত্রী।
এদিকে সন্তান হওয়ার পর সন্তানের সামনেই স্ত্রীকে পাশবিক নির্যাতন চালাতেন ওই শিক্ষক। এছাড়া সন্তানের সঙ্গেও বাজে আচরণ ও তাকে মারধর করতেন বলে অভিযোগ স্ত্রীর। পরে গত বছরের ২৪ জুন স্ত্রী-সন্তানকে মেরে নাটোরে পাঠিয়ে দেন সঞ্জয়। এরপর ভুক্তভোগীর মা-বাবা বিষয়টি মধ্যস্থতা করতে চাইলে সঞ্জয় ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে স্ত্রীকে নিবেন বলে তাদের জানিয়ে দেন তিনি। এদিকে ছয় মাস আগে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর বাবা রতন কুমার সাহা। তবে অভিযোগ করলেও এখনও কোনো প্রতিকার পাননি তারা।
এ বিষয়ে রতন কুমার বলেন, ‘উচ্চশিক্ষিত ছেলে ভেবে আমার মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের আচরণ যে এতটা জঘন্য ও ঘৃণ্য হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। বাবা হিসেবে মেয়ের সুখ চেয়েছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই মেয়ের মলিন চেহারা আমাকে মর্মাহত করতো। আমি আমার মেয়ের ওপর হওয়া অমানুষিক নির্যাতনের বিচার চাই।’
ভুক্তভোগী জয়া সাহা বলেন, ‘আমার ওপর হওয়া নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা। এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়। আমি একটা মোকদ্দমাও করেছি। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না ‘
বিস্তারিত: https://www.somoynews.tv/news/2024-06-05/PY6tF1GI