public/icons8-arrow-back-96.pngসকল

ঈদ নিয়ে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের যত ভাবনা

প্রতিনিধি মোঃ আওলাদ হোসেন হাবিপ্রবি প্রতিনিধি.

রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪ এ ৬:৫৮ PM
https://i.ibb.co/th088TK/IMG20240616-184107.jpg
মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় দুইটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়। ঈদুল আজহা অর্থ হলো  ‘ত্যাগের উৎসব’।

আল্লাহর আদেশে নিজ পুত্র ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর জন্য কুরবানি করার হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর ইচ্ছা ও ত্যাগের কথা স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিনটি উদযাপন করে থাকে এবং এ দিনটিতে মুসলিমরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা কিংবা ছাগল আল্লাহর নামে কোরবানি বা জবাই করে থাকে । সূরা হজের ৩৭নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের জবাই করা পশুর রক্ত-মাংসের দিকে আল্লাহ ফিরেও তাকান না, তিনি দেখেন তোমাদের মনের তাকওয়া।’

 আর ত্যাগ ও মহিমায় মহিমান্বিত এই দিনটিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের ন্যায় ছুটি উদযাপন করে বাড়ি থেকে দূরে থাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঈদ কেমন কাটছে আর কি বা ভাবছেন ঈদ নিয়ে। হাবিপ্রবি'র শিক্ষার্থীদের সেই ভাবনাগুলোই তুলে ধরেছেন ডেইলি মেট্রো'র হাবিপ্রবি প্রতিনিধি মো. আওলাদ হোসেন।

আমার স্মৃতিতে ঈদ

যেহেতু ঈদের দিন সেহেতু সকাল সকাল আব্বুর চিল্লাহাল্লা,"বুড়া দামড়া হয়ে গেছে তবুও সকালে ডেকে উঠাতে হয়!" সাথে কুরবানির গরুর সকাল সকাল হাম্বা হাম্বা ডাক। কি আর বিছানা ছেড়ে উঠতেই হলো। উঠা মাত্রই ছোট বোন এর বায়না তাকে নাকি সালামি দিতে হবে, আর এদিকে গত রাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে পকেট শুন্য! কি আর শেষমেষ বোন এর কাছে মানিব্যাগ বন্ধক রেখেই গেলাম ঈদগাহে।
নামাজ শেষে পুরো মুসলিম উম্মার জন্য দু'আ করা হলো এরপরে গেলাম কবর জিয়ারত করতে। সেখানে গিয়েই দাদার পুরাতন বাড়ির সকল আত্মীয় দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে দু'আ করে বাসায় ফেরা।
এরপর ইব্রাহিম(আ) এর আত্মত্যাগ এর প্রতি পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধা রেখে নিজের পছন্দের গরুটিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করার পালা। এখানে এসে নিজের বাবাকে নিয়ে অনেক গর্ব হয়, বাবা সৎ আর ধার্মিক মানুষ দেখে বাবার হাত দিয়ে নিজেদের গরু কুরবানি করার জন্য এলাকার প্রায় সকলের আবদার বাবাকে মিটাতে হয়। যাহোক এভাবেই মাংস কাটাকাটির মধ্য দিয়ে সারাদিন কেটে গেল।
মাগরিবের পরে আত্নীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সকলের বাড়িতে কুরবানির মাংস পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন এর পরে নিজেদের খাওয়া দাওয়ার পালা। এখানে এসেই আমি কুরবানির আসল তৃপ্তিটা পাই। ছোট থেকেই এই সময়ে এসে বাবা মা আমি আমার বোন দাদি সকলে একসাথে বসে আড্ডা দেওয়া আর খাওয়া সেটা এক অন্যরকম অনুভূতি , দাদি অবশ্য আমাদের মাঝে এখন আর নেই!
এরপরে শুরু হলো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার পালা যা শেষ হলো রাত এগারোটার দিকে বাবার ফোন পেয়ে। এভাবেই কেটে গেল পুরো দিন। আর দিন শেষে হুট করে মাথায় এলো আমার তো ঈদের পরেই সেমিস্টার ফাইনাল!

তানজিমুল আহমেদ হৃদম
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

ধনী -গরীবের ভেদাভেদ মুছে যাক।

ঈদ মানে খুশি, আবার ঈদ মানে ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তিত হওয়া। পুরো বছর জুড়ে বহু প্রতিক্ষার পর বছর ঘুড়ে যখন পবিত্র ঈদ উল ফিতর আসে তখনই কাঙ্ক্ষিত সময় হয় প্রিয়জনের কাছে ফেরার। এর মাস দুয়েক পরেই আসে ঈদ উল আযহা। আবার ফেরা হয় নীড়ে প্রিয়জনদের সাথে খুশি ভাগাভাগি করার উদ্দেশ্যে।
এবারের ঈদ উল আযহা পড়েছে আষাঢ়ের বৃষ্টিস্নাত দিনে। বৃষ্টিতে সবাই ছুটে চলেন আপন গন্তব্যে। অপেক্ষায় থাকা প্রিয়জনদের সাথে উষ্ণ আলিঙ্গনে নিমিষেই ভুলে যায় পিছনে ফেলে আসা কয়েক ঘন্টার যুদ্ধক্ষেত্র। একেকজন তখন দিগ্বিজয়ের হাসিতে প্রফুল্ল। এই প্রফুল্লতার স্বাদ আস্বাদন করতেই মূলত মানুষ ঈদে নীড়ে ফিরে যায়। এই অনুভূতি মনের যতটা গহীন থেকে আসে, যতটা গহীনে শুধু প্রিয়জনের বাস, যতটা গহীন থেকে ভেসে আসে কিছু সম্মোহনী সুরে গাঁথা সুর। প্রিয় পশুর কুরবানির মধ্য দিয়ে কুরবানি দেওয়া হয় অতীতের সব হিংসা, বিদ্বেষ, যন্ত্রণা। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই মেতে ওঠে ঈদ আনন্দে, এই সেই দিন যেদিন ধনী গরীব নির্বিশেষে সবার ঘরেই থাকে একই খাবার, কোনো ভেদাভেদ নেই, নেই কোনো প্রতিযোগিতা।

জয়নাল আবেদীন মীর
মার্কেটিং বিভাগ, বাণিজ্য অনুষদ

কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে 

মুসলমানদের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব এর মাঝে ঈদুল আজহা দ্বিতীয়। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হালাল পশু কোরবানি করতে হয়।  এখানে আল্লাহ তায়ালা শুধু বান্দার তাকওয়া পরীক্ষা করেন। কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা হলো ত্যাগ। পশু কোরবানির সাথে - সাথে নিজের অন্তরের পশুত্বকে বিসর্জন দিতে হবে এটাই কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা। এখানে পশু একটি প্রতীকী বিষয় মাত্র। নিজেদের  অন্তরের অসীম চাওয়া-পাওয়া, লোভ - লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি দমন করার মাধ্যমে কোরবানির প্রকৃত শিক্ষা নিজেদের মাঝে ধারণ করতে হবে । আর এর মাধ্যমেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি, সহিষ্ণুতা ও সাম্য।

কামরুল হাসান 
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ

মনে পড়ে যায় সেই ছোটবেলার ঈদের দিনগুলো

সবাইকে ঈদ মোবারক। ঈদ নিয়ে বলতে গেলেই ছোট বেলার কথা মনে পরে যায়। চাঁদ রাতে হাত ভর্তি মেহেদী দেওয়া, বাজি পোড়ানো, ঈদের সকালে উঠে হাটতে বের হওয়া, নামাজ শেষে সালামি চাওয়া৷ আহা কত সুখের দিন ছিলো সেগুলো। 

কালের পরিবর্তনে এখন আর ঈদ আমেজ আগের মতো নেই। এখন ঈদের ছুটি পেলেই নীড়ে ফিরে আসি, এসেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিতে পারি। মনে হয় হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। বাসায় প্রিয় মানুষগুলোর মুখ স্বস্তি দেয়৷ কিন্তু মনের কোণে ক্যাম্পাস, বন্ধুরা, আড্ডার সময়গুলো নাড়া দেয়৷ আবার চিন্তা আসে ছুটি শেষেই সেই রুটিন জীবনে ফিরতে হবে৷ মিড, কুইজ, এসাইনমেন্টের চাপ। রুটিন জীবনে অনেকখানি স্বস্তির নিশ্বাস এই ঈদের ছুটি। যেখানে প্রতিদিনকার জীবন যখন বিরক্তিকর লাগতো সেখানে ছুটিতে এসে সেই জীবনকেই বড্ড মিস করি। স্থান পরিবর্তনে আমাদের পূর্বের স্থানের প্রতি এক অশেষ মায়া কাজ করে। 

সবার ঈদ সুস্থভাবে পরিবারের সাথে কাটুক। পবিত্র ঈদের ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হোক সবার জীবন।

সিনথিয়া রহমান সানু 
ম্যানেজমেন্ট বিভাগ

এখন ঈদ মানেই যেন একটু শ্রান্তি

পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ শব্দটি শুনলেই মনে পড়ে ছোটবেলায় সবাই মিলে চাঁদ দেখে ঘাসফড়িং এর মতো লাফানোর কথা। পরদিন সকালে উঠে ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করার সময় ঠান্ডা পানি শরীরে ঢালবো কি ঢালবো না, এ নিয়ে দোটানায় পড়ার কথা। দলবেঁধে নামাজ পড়তে যাওয়ার কথা। নামাজ শেষে বন্ধুদের সাথে কয়েকটা খুচরো টাকা নিয়ে ঘুরতে যাওয়া।
সেই ঈদের আমেজ এখন আর নেই। সময়ের সাথে সাথে কর্মব্যস্ততা যেন ঘিরে ধরেছে চারদিক থেকে। ঈদের ছুটি পেলেই সবকিছু পিছনে ফেলে নাড়ির টানে ফিরে আসা হয় মা-বাবার মুখটা দেখতে, কয়েকটি দিন তাদের সাথে কাটিয়েই আবার ফিরতে হয় ক্যাম্পাসে। আবারো সেই কর্মব্যস্ত জীবন। এভাবেই কাটছে আমার ঈদ।

মোঃ হায়দার আলী
ফুড এন্ড প্রসেস ইন্জিনিয়ারিং

ছোটবেলার ঈদ

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঈদ মানে অন্যরকম এক ভালো লাগা। সারাবছর বাসা থেকে দূরে থেকে ছুটিতে বাসায় যেয়ে পরিবারের মানুুষদের সাথে সময় কাটাতে এমনিতেই ভালো লাগে। আর সেটা যদি হয় ঈদের সময় তাহলেতো আনন্দ বেড়ে যায় আরও বহুগুণ। আমার কাছে ঈদের ছুটির সবচেয়ে সুন্দর বিষয় ছোটবেলার বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটানো, পাড়া প্রতিবেশী যারা সারাবছর বাহিরে থাকে তাদের সাথে দেখা হওয়া। ঈদের ছুটিতে পুরো পাড়া জুড়েই একটা উৎসবের আমেজ চলে আসে। ছোট থেকে শুরু করে বড়রা সবাই এতে শামিল হয়। নিজেকে এর সাথে যুক্ত করলে উৎসবটা যেন আরও বেড়ে যায়।
ছোটবেলায় কুরবানির ঈদে কেনা ছাগল নিয়ে আমরা ভাইবোনরা চলে যেতাম দূরের কোন মাঠে,ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে। বাসায় এসে কিছুক্ষণ পরপর দেখতে যেতাম। খাবার ঠিকঠাক আছে কিনা,দড়ি খুলে গেলো কিনা আরও কতশত চিন্তা। এসব ভাবলে কিছুটা হলেও নস্টালজিক হয়ে যাই।
এই সময়ে এসে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার ধরন বদলে গেলেও আনন্দ এতটুকুও কমেনি। আমি মনে করি মানুষ যদি উপভোগ করতে জানে তাহলে তার আনন্দ আসলে কখনোই কমেনা। আমাদের শুধু উপভোগ করাটা শিখতে হবে। ঈদ সবার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসুক। এই কামনা করি।

তালহা হাসান
কৃষি অনুষদ

Copyright © 2024

Daily Metro All rights reserved

Privacy Policy
fb.pngX.pnggmail.pngig.pngwhatsApp.png