public/icons8-arrow-back-96.pngসকল

"বিপ্লবী চেতনার রোমান্টিক কবি" রুদ্র মুহম্মদের ৩৩ তম প্রয়াণ দিবস আজ

প্রতিনিধি শাকিল শাহরিয়ার বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি.

শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪ এ ৬:৪০ PM
https://i.ibb.co/c8ZCGmm/IMG-20240621-WA0003.jpg
"চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয় চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে।" - রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

অকালপ্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ তাঁর কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’ এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততোধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাঁকে পরিণত করেছে তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীকে। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তরজুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রর কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের হাতিয়ার।

রুদ্রর পিতৃদত্ত নাম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ছোটবেলায় এই নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। লেখালেখির জগতে এসে নামটি তিনি নিজেই বদলে দেন। নামের আগে যোগ করেন ‘রুদ্র’, ‘মোহাম্মদ’-কে করেন ‘মুহম্মদ’ আর ‘শহীদুল্লাহ’-কে ‘শহিদুল্লাহ’। নিজ প্রদত্ত এই নাম শুধু লেখক হিসেবেই নয়, পরীক্ষার সনদেও তিনি ব্যবহার করেছেন।

কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশালের রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে বাবার চাকরির সুবাদে বাগেরহাটের মোংলায় বসবাস শুরু করেন কবির পরিবার। পরে উপজেলার মিঠাখালী এলাকায় স্থায়ীভাবে থাকেন তারা। কবির মা শিরিয়া বেগম, বাবা শেখ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন চিকিৎসক। কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ‘র ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিন ভাই মারা গেছেন। কবির ভাই ও স্বজনরা এখন মোংলাতেই থাকেন। রুদ্র ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সালে বিএ অনার্স (বাংলা) ও ১৯৮৩ সালে এমএ পাস করেন।

রুদ্র বিয়ে করেন ২৯ জানুয়ারি, ১৯৮১ সালে। স্ত্রীর নাম লীমা নাসরিন। পরবর্তীকালে তিনি তসলিমা নাসরিন নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন ও নিজের বিতর্কিত লেখালেখির জন্য আলোচিত হন। তসলিমা মূলত ছিলেন চিকিৎসক। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। রুদ্র ও তসলিমার পরিচয় লেখালেখির সূত্র ধরে। পরিচয় ক্রমে রূপ নেয় প্রণয়ে। রুদ্র বিয়ে করেছিলেন সামাজিক প্রথা ভেঙে, অভিভাবকের অমতে। রুদ্র-তসলিমার দাম্পত্য জীবন ভালোই কাটছিল। কিন্তু রুদ্র-তসলিমার এই সুখের সংসার স্থায়ী হয়নি। ছয় বছর দাম্পত্য জীবন শেষে তারা আলাদা হয়ে যান। ১৯৮৬ সালে উভয়ের সম্মতিতে তালাক হয়। বিচ্ছেদের পর রুদ্রর বিরুদ্ধে তসলিমা নানারকম অভিযোগ তুলেছেন।

ছাত্রজীবনেই তার দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯) ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১) প্রকাশিত হয়। এ দুটি কাব্য তাকে কবি খ্যাতি এনে দেয়। মাত্র ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন।

উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দু’বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

প্রয়াত এই কবি তার কাব্য যাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’ এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততোধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এ। একই সঙ্গে তার কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রের কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের হাতিয়ার। ক্ষণা জন্মা এই কবি ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
২০২৪ সালে ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পেয়েছেন রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর)।

কবির লেখা বিখ্যাত গানের দুটি লাইন দিয়ে শেষ করতে চাই-

"ভালো আছি ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।"

Copyright © 2024

Daily Metro All rights reserved

Privacy Policy
fb.pngX.pnggmail.pngig.pngwhatsApp.png