public/icons8-arrow-back-96.pngসকল

সিন্ডিকেটের নির্দেশ অমান্য করলেন জাবি প্রক্টর!

মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪ এ ৩:১৯ AM
https://i.ibb.co/BLsG3XF/images-32-original-1716829876.jpg
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অ্যাকাডেমিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় গত বছরের অক্টোবরে বর্তমান ও সাবেক ব্যাচগুলোর বর্ষপূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে সিন্ডিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও সম্প্রতি একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারণী কর্তৃপক্ষের নেয়া এই সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করায় বর্তমান প্রক্টরের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।


রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখা, ঘন ঘন এসব অনুষ্ঠানের কারণে ক্যাম্পাসে অপরাধমূলক কাজে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পরা এবং ক্যাম্পাসে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ায় অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান আয়োজন সীমিতকরণে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ০৯ অক্টোবর রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, ’বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠান প্রতি ৩ (তিন) বৎসরে একবার আয়োজন করা যাবে, বিভিন্ন ব্যাচের (সাবেক ও বর্তমান) বর্ষপূর্তি/ রিইউনিয়নের অনুষ্ঠান করা যাবে না এবং রাত ১০ টার পর কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। রাত ১০ টার পর কোনো অনুষ্ঠান করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে এবং আয়োজক সংগঠনকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। পরবর্তীতে উক্ত সংগঠনকে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হবে না।’
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেয়া নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি ব্যাচ তাদের বর্ষপূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজনের অনুমতি চাইলেও দেয়া হয়নি। গত ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম ব্যাচ অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি না পেয়ে শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের মিলনায়তনে তাদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু গত ১২ মে ৫০ তম ব্যাচের (২০২০-২১ সেশন) শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনের জন্য অনুমতির আবেদন করলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অনুমোদন করেন বর্তমান প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির। আবেদনের দিন মৌখিক আশ্বাস এবং পরদিন অনুষ্ঠান আয়োজনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন প্রক্টর। সেসময় অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ২৫ মে বিকাল থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুষ্ঠান আয়োজনের দিন বেঁধে দেয়া সময়সীমা মানেননি শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ৯টার অনুষ্ঠান চলেছে রাত এগারোটা পর্যন্ত। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে না পারলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। সিন্ডিকেটের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও বর্ষপূর্তি আয়োজনের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির গণমাধ্যমকে বলেন,'আমি অনেক শর্ত সাপেক্ষে ওদের অনুমতি দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিকশিত হওয়ার জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দরকার আছে। তবে ওদের আমি নয়টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার কথা বলেছিলাম।কিন্তু ওরা প্রায় এগারোটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করেছে। আমরা আর এ ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি দিব না।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বহিরাগত নারী ধর্ষণের ঘটনার পর উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবাধে মাদকসেবন এবং মাদক ব্যবসার বিশাল সিন্ডিকেটের কথা। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীদের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান চলাকালে ও শেষে গভীর রাত পর্যন্ত উক্ত অনেক শিক্ষার্থীকে মুক্তমঞ্চ, টিএসসি ও কাফেটেরিয়া এলাকায় অবাধে মদ্যপান ও গাঁজা সেবন করতে দেখা যায়। এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
বর্ষপূর্তি আয়োজক কমিটির একটি সূত্র জানায়, অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কেনা হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মাদকদ্রব্য। শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের জন্যই কেনা হয় ২০ হাজার টাকার মদ। অবাধে মাদক সেবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, যেকোনো অনুষ্ঠান হলে ঐটা (মাদক) কমন। আমরা একটা কমিটি করব মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য।
এদিকে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করার মাধ্যমে বর্তমান প্রক্টর অদায়িত্বশীল আচরণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুসারে সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নির্বাহী কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা দায়িত্বশীলতার পরিচয় নয়। প্রক্টর মহোদয়কে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভবিষ্যতে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ বলেন, 'সিন্ডিকেট থেকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করবে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্ত যদি কার্যকর না হয় সেক্ষেত্রে প্রশাসনে যারা দায়িত্বে আছেন, তাদেরকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।'

Copyright © 2024

Daily Metro All rights reserved

Privacy Policy
fb.pngX.pnggmail.pngig.pngwhatsApp.png